মোরগ পোলাও লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মোরগ পোলাও লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সেরা বিরিয়ানির তালিকা

পুরান ঢাকা মানে বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত। প্রতিটা মোড়ে মোড়ে বিরিয়ানির দোকান থাকবে এমনটা স্বাভাবিক। নবাবের আমল থেকে এখানে বিরিয়ানির প্রচলন হয়ে আসছে। নবাবরা অর্ধ শতাধিক বিখ্যাত মশলার সমন্বয়ে বিরিয়ানি খেতেন। এজন্য পুরান ঢাকার চকবাজারে মশলার পাইকারী বাজার গড়ে উঠেছে। ব্যতিক্রমী মশলার সমন্বয়ে সব বিরিয়ানি হাউজের সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতা থাকে। পুরো রাজধানীর বিভিন্ন যায়গা থেকে পুরান ঢাকায় আসেন বিখ্যাত মজাদার বিরিয়ানি খেতে।

পুরান ঢাকার বিরিয়ানি খেতে দিন রাতে যেমন ভীড় দেখা যায় তেমনি বিরিয়ানির দোকানের ভীড়ে কারা সেরা সেটা বাচাই করা কঠিন কাজ। প্রতিনিয়ত দুপুর রাতে নাজিরা বাজার চৌরাস্তায় ভীড় লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহ্যবাহী ১০টি সেরা বিরিয়ানি তুলে ধরলাম পাঠকের সুবিধার্থে।

১. সুলতান ডাইন

রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকায় সুলতান ডাইনের শাখা রয়েছে। তবে পুরান ঢাকার বংশাল থানার অধীনে আবুল হাসনাত রোডে এর প্রধান শাখা রয়েছে। বর্তমানে যতগুলো বিরিয়ানি রেঁস্তোরা রয়েছে তারমধ্য স্বাদ ও কাস্টমার রিভিউতে অন্যতম প্রধান স্থান দখল করে আছে সুলতান ডাইন। তাদের বিরিয়ানির প্রধান আকর্ষন হচ্ছে বাসমতী চালের কাচ্চি। বারবিকিউ করা এ খাবারের স্বাদ যেমন অনন্য তেমনি ভোজন রসিকদের লাইন থাকে এ খাবার গ্রহন করতে।

তাদের সুলতানি কাচ্চি ঢাকার গন্ডি পেরিয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে গিয়ে পৌঁছেছে। বিভিন্ন সময় অফার দিয়ে ভোজন রসিকদের সন্তুষ্ট করে থাকে সুলতান ডাইন। তাদের বিভিন্ন আউটলেটে বিয়ে, জন্মদিন, হলুদের জন্য বিশেষ অফার দিয়ে থাকে। এসব আকর্ষনীয় অফার পেতে তাদের ফেসবুক পেইজে নিয়মিত চোখ রাখুন আর উপভোগ করুন সুলতানি বিরিয়ানীর স্বাদ।

২. গ্রান্ড নবাব

ছুটির দিনে মন ভরে কাচ্চি না খেলে কি হয়!! চলে আসুন আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে গ্যান্ড নবাব এর নবাবী কাচ্চি উপভোগ করতে। কাচ্চি কিংবা যেকোনো শাহী ভোজ হোক গ্রান্ড নবাবের আয়োজনে!

উপরের এমন সব বাহারী কথা যেমন গ্রান্ড নবাবের প্রচার বুলি তেমনি তাদের খাবারের ধরন ও স্বাদ তেমন বাহারী। পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন লেনের নাজিরা বাজার চৌরাস্তায় গ্রান্ড নবাবের প্রধান শাখা। এছাড়াও তাদের আরো শাখা রয়েছে। তাদের বিরিয়ানি আইটেমগুলোর মধ্য নবাবী কাচ্চি, শাহী ভোজ, স্যার সলিমুল্লাহ ভোজ, নবাবী জর্দা অনন্য।

৩. হাজী বিরিয়ানি

পুরান ঢাকার নাজিরা বাজার চৌরাস্তায় কাজী আলাউদ্দিন লেনে ১৯৩৯ সাল থেকে খাসির মাংসের ঐতিহ্যবাহী এ বিরিয়ানি চালু করেন হাজী মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে বংশ পরম্পরায় এ রেঁস্তোরাটি চলে আসছে ঐতিহ্যর সাথে।

হাজী মোহাম্মদ হোসেন নামে এক বাবুর্চি শুরু করেছিলেন এ ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানির রেঁস্তোরা। ১৯৯২ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন মারা যাওয়ার পর, তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ গোলাম হোসেন এ দায়িত্বভার গ্রহণ করে ঐতিহ্যের কোন পরিবর্তন না করেই তাদের এ পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে হাজী মোহাম্মদ গোলাম পারিবারিক ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বিরিয়ানির রেঁস্তোরাটি তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ শাহেদের হাতে তুলে দেন। তিনিও বর্তমানে নতুনত্বের সাথে পাল্লা দিয়ে ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

বিভিন্ন প্রকার মসলার সমন্বয়ে খাসির মাংসের তৈরি বিরিয়ানি রেঁস্তোরাটি কাজী আলাউদ্দিন লেনের শাখা ছাড়াও মতিঝিলে আরেকটি শাখা রয়েছে।

বাবুর্চি হাজী মোহাম্মদ হোসেনের রাস্তার পাশে বিক্রি করা বিরিয়ানির দোকানটি একসময় শহরের সমস্কৃতির অংশ হয়ে উঠবে তা ঐসময় কেউ হয়ত কল্পনা করেনি।
৪. হাজী নান্না বিরিয়ানি

পুরান ঢাকার বেচারাম দেউরি ও মৌলভীবাজার সংলগ্ন এলাকায় ১৯৬২ সালে বাবুর্চি নান্না মিয়া বিরিয়ানির রেঁস্তোরা দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সময়ের সাথে তার এই রেঁস্তোরা ঢাকার ঐতিহ্যর অংশে পরিনত হয়।

তার এ রেঁস্তোরা খাসির কাচ্চি, মোরগ পোলাও, খাসির বিরিয়ানি, খাসির রেজালার জন্য বিখ্যাত হয়ে। তাদের রেঁস্তোরায় বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অর্ডার অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করে থাকেন।

হাজী নান্না মিয়ার শাহী মোরগ পোলাও রেঁস্তোরার প্রধান এ শাখাটি ছাড়াও আরো ৪টি শাখা রয়েছে। ভোজন রসিকরা খাবারের স্বাদে ছুটে আসেন হাজী নান্না মিয়ার বিরিয়ানি রেঁস্তোরায়।

৫. হানিফ বিরিয়ানি

পুরান ঢাকার আরেকটি জনপ্রিয় বিরিয়ানির রেঁস্তোরা হচ্ছে হানিফ বিরিয়ানি। পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে তার হানিফ বিরিয়ানির যাত্রা করেন। সে থেকে ঐতিহ্যর সাথে ১৫ টাকা হাফ প্লেট বিরিয়ানি থেকে ঐতিহ্যর সাথে চলে আসছে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ মজাদার বিরিয়ানি খেতে ভোজন রসিকদের ভীড়ে লেগেই থাকে। ২০০৫ সালে হাজী হানিফের মৃত্যুর পর তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম রনি তার রেঁস্তোরা দ্বায়িত্ব নেন। সকাল ১১টা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত বিরামহীন বিরিয়ানির সরবরাহ চলতে থাকে। বর্তমানে প্রধান এ শাখাটি ছাড়াও রাজধানী জুড়ে অনেকগুলো শাখা হয়েছে। সবগুলো শাখায় খাবারের মান ও স্বাদ সমান রাখার চেষ্টা করা হয়।

এছাড়াও পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানিগুলোর মধ্য রয়েছে উর্দু রোদের রয়েল বিরিয়ানি, নারিন্দার ঝুনার কাচ্চি বিরিয়ানি, সাত রওজার কোলকাতা কাচ্চি ঘর, মালিটোলার ভুলুর বিরিয়ানি, নবাবপুরের স্টার হোটেলের কাচ্চি, নাজিম উদ্দিন রোডের বিরিয়ানি, বাবু বাজারের খুশবু বিরিয়ানি ও কাচ্চি ঘর, ইসলামপুরের ছনঘরের তেহেরী, কাশ্মীরি বিরিয়ানি।

বিরিয়ানি ও মুখরোচক খাবারের সুনাম আজও ধরে রেখেছে পুরান ঢাকা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হাজারো খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। কিন্তু পুরান ঢাকার সেই কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহরির আজও অম্লান হয়ে আছে স্বাদে ও ঐতিহ্য।