কক্সবাজার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
কক্সবাজার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

কক্সবাজারে একা একা একদিন!

সময়টা ২০০৯ সাল। একটা জরুরী কাজে পল্টন অফিসে আছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যে কয়েকজন অফিসে আছি তাদের কয়েকজনকে সিলেক্ট করা হয়েছে আজ রাতের ১০টার গাড়িতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হবে। অফিসের বড় কর্তার নির্দেশ। রাত ৮টার দিকে বলা হল আপনার জন্য কক্সবাজারের টিকেট কাটা হয়েছে। অমনি টিকেট ও কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে বলল আপনার এখন ছুটি সময়মত আপনি ফকিরাপুল বাস স্ট্যাশনে থাকবেন।

১০টার হানিফ বাস ১০.৩০মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিল। কুমিল্লা দিয়ে যাত্রা বিরতি হল। কুমিল্লার নূরজাহান হোটেলে বিরতি শেষে বাস ছাড়ল। গাড়িতে উঠার পূর্বে কুমিল্লার রসমালাইয়ের স্বাদ নিতে ভুলিনি। 

ভোরে গিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছলাম। কক্সবাজার অফিসের লোকজন রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গেল। যথারীতি আপ্যায়ন শেষে আমার কাছ থেকে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বুজে নিলেন। সাথে একটা খাম দিয়ে বললেন এটা আপনার রিটার্ন টিকিট। বেলা ১১টায় বাসে উঠতে মন চায়নি। টিকিট রিটার্ন করে রাত ১০.৩০ মিনিটের জন্য বুকিং দিলাম। ঐদিন রাত আর্জেন্টিনার খেলা ছিল। রাত ৮টায় খেলা দেখে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলল শো শো গতিতে মনের সুখে।

সারাদিন একা একা বিচে ঘুরলাম। কোন পরিচিতজন নেই। এরপূর্বে যতবারই কক্সবাজার অথবা কোথায়ও ঘুরতে গিয়েছি একা একা ঘুরতে যাইনি। ঐবার প্রথম একা ঘুরার নিঃসঙ্গতা অনুভব করলাম। সবাইকে দেখলাম কত রং বেরংয়ের মজা করছে। আর আমি নিরবে এসব হজম করে যাচ্ছি। কেউ ছবি তুলছে, কেউ বীচে ভিজছে, কেউ সঙ্গীর হাত ধরে হাঁটছে, কেউ জীবিকার জন্য বীচে কলা বিক্রি করেছে, বীচের শিশুরা শামুক ও ঝিনুকের মালা বিক্রি করছে। 

আমাদের জীবনটা সত্যিকার অর্থে ঐ একদিনের সফরের মত। দুনিয়ায় আসলাম ও জীবন ফিরিয়ে পরপারে চলে গেলাম। কক্সবাজার যেমন থাকার যায়গা নয় তেমনি দুনিয়া তেমনি থাকার নয়। প্রার্থক্য শুধু সময়ের। একটা সময় দীর্ঘ আর একটা সময় ক্ষীণ। কবরের হাজার বছরের জিন্দেগীর তুলনায় দুনিয়ার জীবন তেমনি ক্ষীণ। কক্সবাজার থেকে যেমন মালা, আচার, চকলেন, সামুদ্রিক কিছু উপকরন ছাড়া আনতে পারিনি। তেমনি কবরের জীবনে পৌঁছার সময় সাদা কাফন ছাড়া আমরা কিছু নিতে পারব কি? হ্যাঁ পারব। সেটা কি? আমরা সারাজীবন ধর্মীয় যে অনুশাসন মেনে যতটুকু কাজ করেছি কতটুকু নিতে পারব।

গাড়ি মনের সুখে চলতে চলতে পৌঁছল কর্নফুলি ব্রীজের উপর রাত তখন ১টার কাছাকাছি। সারাদিনের ভ্রমন ক্লান্তির একটা আনন্দদায়ক ঘুম এসেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাস চট্রগ্রামে অবস্থান করছে। আমি চোখমেলে দেখে হতবাক। যেখানে সায়েদাবাদ থাকার কথা সেখানে আছি চট্রগ্রাম শহরে! পরে অবশ্য জানতে পরলাম ঐদিন শহরে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হওয়াতে পুরো শহরজুড়ে মিছিল মিটিংয়ে শহর জ্যামে বড্ড ক্লান্ত ছিল। 

পরদিন দুপুর বেলা কুমিল্লা এসে হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম। ক্ষুধার্ত অবস্থায় নূরজাহান হোটেলের সেদিনের রুই মাছের ঝোল আজোও জিবে জল আনে। কোন সমস্যা ছাড়া পরবর্তীতে বিকালে ঢাকায় পৌঁছালাম। অফিসে রিপোর্টিং শেষ করে বাসায় এসে ক্লান্তিহর এক ঘুম দিলাম। 

এভাবে কষ্টে আনন্দে একা একা কক্সবাজারের একটা ট্যুরের সংখ্যা বাড়লো।