মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

দরিয়া-এ-নূর দেখতে আহসান মঞ্জিলে একদিন!

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার জন্য ২০০৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে ঢাকা থাকি। কোচিং ব্যস্ততার পাশাপাশি অনেক স্থানেই ভ্রমন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য চট্রগ্রাম ও রাজশাহী ভ্রমন হয়েছিল। কিন্তু ভ্রমন হয়নি ঢাকার শাসনকর্তাদের বাসবভন ও রাজকার্য পরিচালনার স্থান আহসান মঞ্জিল।

২০১৫ সাল থেকে ব্যবসায়িক কারনে পুরান ঢাকায় থাকি। প্রথমে আগামাসি লেনের বাসায় পরবর্তীতে বাবুবাজারে থাকি। বাবুবাজার থেকে ৫ মিনিটের দূরত্ব আহসান মঞ্জিলে  যাবো যাবো করে যাওয়াই হয়নি। অথচ পুরান ঢাকার নবাবের ১৪০০ বংশধরের একজনের মাধ্যমেই ব্যবসাতে আসা। সেই বিশ্বস্ত পথনির্দেশক সৈয়দ মোস্তফা সাবের শিশির ভাইয়ের বাবায় আহসান মন্জিলের যে কোন এক বিভাগে দ্বায়িত্বে আছেন। তিনিও বলতেন একদিন নিয়ে যাব আপনাকে। কারন উনার টিকিট লাগেনা সেখানে যেতে।

অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ এল আহসান মঞ্জিল যাওয়ার। ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের বার্ষিক ট্যুর হল ঢাকার আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লায়। ঢাকা শাখার দ্বায়িত্বে থাকায় আমাকে ঢাকার প্ল্যান ও সকল কিছু ব্যবস্থাপনা করতে হয়েছে।

প্রথমে সবাই লালবাগ কেল্লায় প্রদর্শন শেষ করে দুপুরের পর কেল্লার মোড় থেকে রাজধানী ঢাকার কোতয়ালী থানার অন্তর্গত ইসলামপুরে আহসান মঞ্জিলে পৌঁছলাম। টিকিট কেটে প্রবেশ করতেই গেটের পাশে একটা কারুকার্যের ছোট কক্ষ দেখতে পেলাম। সাধারনত নিরাপত্তার জন্যই এমন কক্ষ করা হয়েছে। তারপর সারি সারি ফুলের বাগান। এ যেন মোহনীয় সবুজে ঘেরা নদীর শীতল হাওয়ার এক কোমল পরিবেশ। বিকালে অবসর ও পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর এক সুন্দর পরিবেশ। যা যেকোন যুগলকে আকৃষ্ট করতে বাধ্য।

নির্দেশমত প্রবেশ পথে আমরা সারিবদ্ধ ও দলবদ্ধ হয়ে প্রবেশ করলাম। পাশে থেকে লেখক ফোরামের সদস্যরা সময়টাকে আনন্দময় করে তুলেছিল। প্রবেশপথের মুখে সৈনিকের প্রতিকৃতি যেন নবাবের যুগের সময়কে মনে করিয়ে দেয়। আমরা যারা স্বচোক্ষে নবাব ও রাজাদের দেখিনি তারা এমন পরিবেশ দেখে নিজেকে সেময়ের কল্পলোকের ভাবনায় নিয়ে যাওয়া মোটেও বাড়াবাড়ি হবেনা। প্রথম যারা এসব জিনিস দেখে তাদের চোখ চানাবাড়া হবেই। আমরা গল্পে ও রূপকথায়  রাজাদের জিনিস পড়তাম কিন্তু তা চোখের সামনে দেখার আনন্দ সীমাহীন।

একে একে সেসময়ের সবার ছবি, তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, আসবাবপত্র, তাদের যুদ্ধের সরন্জাম, রাজকার্য চালানোর উপকরনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখা হল। যা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যর বাহক হিসেবে আসছে যুগের পর যুগ। এমন সব জিনিস যা কোথায়ও সাধারনদের দেখার ও ব্যবহারের সুযোগ নেই এমন আকর্ষণীয় রাজকীয় জিনিস দেখে সবার জ্ঞানের পরিধি সমৃদ্ধ হবে। 

যে জিনিসটা সেখানে চোখে পড়েনি তা হল এই রাজকীয় পরিবারের সবচেয়ে অমূল্য রতন ‘দরিয়া-এ-নূর’। বাংলাদেশ মাটির নিচে পাওয়া এ অমূল্য রত্ন পাওয়ার পর নবাবের কোষাগারে জমা করা হয়। তৎকালীন রানী এলিজাবেথের কাছে একটি কোহিনূর এবং বাংলাদেশের নবাবের কাছে একটি কোহিনূর ছিল। বিশ্বে আর কোথায়ও এ কোহিনূর নেই। বিশ্ব পরিসংখ্যান মতে এই দুইটি কোহিনূর এখনো বিদ্যমান। অথচ এত মহামূল্যবান একটি রত্ন দর্শনীর্থীদের জন্য দেখানো বা উন্মুক্ত করা হয়নি কেন তা সাধারন নিরাপত্তারক্ষী ও দ্বায়িত্বরত কেউই সেদিন বলতে পারেননি।

আমরা জানি যে, কোহিনূর একটি অমূল্য রত্ন। এটি ক্রয় করার জন্য পৃথিবীতে কোন সম্পদ নেই। উইকিপিডিয়া সূত্রে জানতে পারি একটি খোলা ময়দানে দাঁড়িয়ে একটি ঢিল উপরে ও চতুর্পাশে চূড়ায় যতটুকু দূরুত্ব তৈরি হয় কতটুকু যায়গায়  স্বর্নমূদ্রা দিয়ে ভরে দিলে তার যা দাম আসবে কতটুকু দামই হচ্ছে এ কোহিনূরের। সত্যিকার অর্থে পৃথিবীতে কারো কেনার সামর্থ হওয়ার কথা নয় এটি।

অধীর আগ্রহে যে ‘দরিয়া-এ-নূর দেখতে সেখানে গেলাম তার আশা অপূর্ন থেকে গেল তবে যা দেখেছি তা স্মৃতির পাতা ও জ্ঞানের রাজ্য খোরাক মিটিয়েছে। পরবর্তীতে গুগুল করে জানতে পারি যে এ ‘দরিয়া-এ-নূর’ সরকারের হেফাজতে সোনালী ব্যাংকের লকারে গচ্ছিত আছে। কারো কারে মতে এ ‘দরিয়া-এ-নূর’ চুরি হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। কোনটা সত্য এটা জানার কোন উপায় নাই আমার মত সাধারন মানুষের।

তবে আশাহত হইনি এখনো ‘দরিয়া-এ-নূর সম্পর্কে। কোন একদিন স্বচোক্ষে দেখ সেই আশা পূর্ন হবে ইনশাআল্লাহ।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for your valuable comments.